শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিকদের ধর্মঘট

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা : ফিনলে কোম্পানীর চা বাগান কর্মচারীর স্বাভাবিক বদলী প্রক্রিয়া ও এক অস্থায়ী চা শ্রমিককে স্থায়ী নিয়োগের দাবীতে শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করেছেন।

শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউপির  সিন্দুরখাঁন চা বাগানে দিনভর ধর্মঘট করেন চা শ্রমিকরা ।

জানা যায়, সিন্দুরখাঁন চা বাগানের অস্থায়ী চা শ্রমিক শ্যামল দাসকে স্থায়ীভাবে কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া এবং একই বাগানে অন্য বাগান থেকে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বদলী করে আনা কর্মচারীকে পুনরায় ফিরিয়ে নেওয়াসহ ১৭ টি দাবীতে ধর্মঘট পালন করে শ্রমিকরা।

এ বিষয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ বলছে, চা শ্রমিক পদের ব্যক্তিকে কর্মচারী হিসেবে  নেওয়ার দাবী রয়েছে। শ্যামল বুনার্জী চা বাগানের একজন রেজিষ্টার্ড শ্রমিক এবং মোটামুটি শিক্ষিত। সে হিসেবে তাকে আমরা অফিসে সহায়ক হিসেবে কাজ করার অনুমতি দিয়েছি। মূলত তিনি শ্রমিক, কর্মচারী নয়। যেহেতু তিনি অনেকদিন ধরে কাজ করছেন সেহেতু তাকে ডেকে নিয়ে আমরা কথা বলেছি। সে ও বলেছে, এসব বিষয়ে তাঁর সম্পৃক্ততা নেই। বর্তমানে তিনি চা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন তাকে অন্যত্র দেওয়া যায় কিনা সেটা কর্তৃপক্ষের মাথায় রয়েছে।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী চা শ্রমিক শ্যামল দাস বলেন, আমি গত বিশ বছর ধরে এই পদে (ট্যালি ক্লার্ক) অস্থায়ীভাবে কাজ করে আসছি,বাগান কতৃপক্ষ আমার চাকরি স্থায়ীকরনের নিশ্চয়তা দিয়েছিল কিন্তু গতকাল এই পদে বহিরাগত অন্য একজন কে নিয়োগ দিয়ে দিয়েছে এই কারনেই আমরা সব শ্রমিকরা ধর্মঘটে আছি ।

ধর্মঘটে যোগদানকারী কয়েকজন সাধারণ চা শ্রমিক বলেন, রুটি খেয়ে হাড়ভাঙা খাটুনি করে ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করছি। চা বাগান শ্রমিকদের ছেলে মেয়েরা আইএ- বিএ পাশ করে কি কোদাল দিয়ে মাটি তুলবে? তাহলে আর পড়াশোনা করানোর তাগাদা কেন? সরকারী চাকুরীতে টাকা লাগে এতো টাকা আমাদের নাই, বাগানের অধিবাসী শ্রমিক পরিবারের শিক্ষিত ছেলে – মেয়েদের বাগানেই চাকুরী দিতে হবে, বাইরের লোক নেওয়া যাবে না, বাইরের লোক হাটাতে হবে।

শ্রমিকরা আরো বলেন, আমরা আওয়ামীলীগ সরকারকে ভোট দেই, সরকারও আমাদের এলাকার শিক্ষিত ছেলে মেয়েদের চাকুরী দিতে হবে। দেখি সরকার আমাদের পাশে আছে কি নাই।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী জানান, এ বিষয়টি সমাধানকল্পে চেষ্টা চলছে, শুনেছি, সাধারণ চা শ্রমিকরা দাবীনামা পেশ করেছেন।

চা বাগানে কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা বলছি না যে শুধু চা শ্রমিকের সন্তানদেরকেই দিতে হবে, আমরা নিয়োগে অগ্রাধিকার চাই। আমরা বাগান কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানিয়েছি, চা শ্রমিক সন্তানদের স্টাফ হিসেবে চাকুরীর আবেদনে বিএ সমমান এর বদৌলতে ইন্টারমিডিয়েট (এইচএসসি পাস) ছেলেদের সুযোগ দেবার জন্য কারন চা শ্রমিক সন্তানেরা এই শিল্পের সাথে ছোট থেকে বড় হয়ে আসছে ফলে তাদের বাগান সম্পর্কিত বেশ জানাশোনা রয়েছে, দেখা যাবে হয়তো অন্য ছেলের এখানের সংস্কৃতি, চা বাগানের কাজ বুঝতেই অনেক সময় লেগে যেতে পারে।’

পঞ্চায়েত সভাপতি মিঠুন বোনার্জী বলেন, আমাদের বাগানে খালি পোস্ট রয়েছে, শিক্ষিত শ্যামল বাবু দুইযুগের বেশী সময় ধরে অফিসে চাকুরী করে আসছেন। এখন তাকে বাবু (কর্মচারী) না করে নতুন একজন বদলী করে আনায় আমাদের দুঃখ লাগছে। আমরা চাইছিলাম, তাকে মানিক বাবুর যে পোস্টে ছিলেন ঐ বাবু (কর্মচারী) করা হোক।

কর্মচারীর বদলী নিয়ে বাংলাদেশ টি এস্টেট স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আহমেদ বলেন, কর্মচারীর স্বাভাবিক বদলী প্রক্রিয়াকে নিয়ে শ্রমিকদের ধর্মঘট করার তো কোন মানে নেই। আইনানুযায়ী শ্রমিক বলতে বুঝায় সাধারণ শ্রমিক এবং কর্মচারীরা (স্টাফ)। কর্মচারীর বদলী বাতিল করার যে কথা বলা হয়েছে তা দুঃখজনক ও অনাকাঙ্খিত। তবে চা বাগানে এখন কেউ বাগানের শ্রমিক পরিবারের শিক্ষিত ছেলেদের বাগানেই কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করতে হবে এরকম দাবী সহকারে চাপ প্রয়োগ করছেন। তবে নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশের নাগরিক যে কেউ যোগ্যতা বিবেচনায় চা বাগানে কর্মচারীর চাকুরীর আবেদন করতে পারেন এবং যোগ্যতা স্বাপেক্ষে চাকুরী পেতে পারেন। স্বাভাবিকভাবে এখানে ব্যক্তির পরিচয় বিবেচ্য নয়, বিবেচ্য হয় তার মেধা যোগ্যতা। সুযোগ সবার জন্য সমান। আবেদনকারীদের মধ্যে যোগ্যতা প্রমাণ করে যে কেউ আসতে পারেন। আমাদের টি এস্টেট স্টাফ এসোসিয়েশনের চুক্তিনামায় কর্মচারীদের সন্তান/পোষ্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নেওয়ার কথা বলা আছে।

এ ব্যাপারে রাজঘাট ডিভিশনের ডিজিএম মাইনুল হাসান বলেন, ফিনলে কোম্পানীর ফয়জাবাদ চা বাগান থেকে বদলী হয়ে রাজঘাট চা বাগানের ফাঁড়িবাগান সিন্দুরখাঁন চা বাগানে বদলী হয়ে আসা কর্মচারী বদলী বাতিল করে পুনরায় তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার আহবান জানায়। কর্মচারীর স্বাভাবিক বদলী প্রক্রিয়াকে কোন অজুহাতে বাধাগ্রস্থ করার তো যৌক্তিকতা নেই। কর্মচারীর বদলীর ব্যাপারে সাধারণ শ্রমিকদের এ ধর্মঘটকে অযৌক্তিক ও চা শিল্পের জন্য হুমকী হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেজিষ্টার্ড শ্রমিক শ্যামল দাসকে কর্তৃপক্ষ সাধারণ চা শ্রমিককে চাকুরী বঞ্চিত করেনি, তার কাজের ধরন বদলে অন্য কাজে দিতে পারেন বা তাকে কর্মচারী (আইনানুযায়ী শ্রমিক) হিসেবে নিয়োগ প্রদানের যে দাবী রয়েছে সে সম্পর্কেও আমরা অবগত।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com